Skip to content
Menu
Ahsan Habib
  • Home
    • About Ahsan
    • Gallery
    • Extra Corner
  • Ahsan’s Blog
  • Audio Story
  • Video Story
  • Media Laws
  • Contact Ahsan
Ahsan Habib

প্রবণতায় আবর্তন

Posted on November 25, 2016August 10, 2018

[লেখাটি বিসিএস তথ্য সাধারণ বেতার কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি কর্তৃক অনুরণন-৪ সংখ্যায় প্রকাশিত*, প্রকাশ তারিখ: এপ্রিল-২০১৬ খ্রিস্টাব্দ/

This article is published by BCS Information General Radio Officers’ Association for Welfare in their journal titled Aunoronon, volume : 4, dated: April-2016]

 

article-2চার্লস ডারউইন তার বিখ্যাত অরিজিন অব স্পেসিস গ্রন্থে লিখেছিলেন, “প্রানীকূলের সব থেকে শক্তিশালী কিংবা সব থেকে বুদ্ধিমান প্রজাতীটি টিকে থাকবে এমনটি নিশ্চিত নয়, বরং পরিবর্তনের সাথে সব থেকে বেশী খাপখাওয়াতে পারে এমন প্রজাতীটির টিকে থাকার সম্ভাবনাই সব থেকে বেশী”। অন্যেরা কি বলবেন, জানি না  তবে, আমার প্রিয় আলু ভাই বিষয়টির সাথে সম্পূর্ণ এক মত, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত । আলু চৌধুরী  আমার বড় ভাই। বড়ই জ্ঞানী মানুষ। অনেক কিছু জানেন। আমি অবাক হয়ে ভাবী একজন মানুষ এত কিছু এক সাথে কিভাবে জানতে পারেন?  এও কি সম্ভব! আজ থেকে অনেক বছর আগে আলু চৌধুরীর সাথে পরিচয়। চাকুরী জীবনের শুরু থেকেই। ভাইয়ের সাথে আমার অনেক বিষয়ে কথা হয়। পেশাগত জীবন থেকে শুরু করে ব্যক্তি জীবনের নানান বিষয় নিয়ে কথা বলি । আলু ভাই সব বিষয়েই মতামত দেন। কি অবাক কান্ড! প্রতিটি মতামতই অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ!

উন্নয়ন ও বেতার মাধ্যমের সম্পর্ক বিষয়ে জানতে গত কয়েকদিন ধরে ইন্টানেট ব্রাউজ করছি। বলা যায়, অনেক কিছুই পাচ্ছি আবার কিছু পাচ্ছিও না। এমনি অবস্থায়, আলু ভাইকে বিষয়টি বলতেই, বললেন: দূর মিয়া, এইটা কোনও বিষয় হইল। তুমি আমারে জিগাইবানা?

তিনি বললেন     : বাংলাদেশ বেতার, প্রতিদিন ৪৭৭ ঘন্টা অনুষ্ঠান করে শুধুমাত্র উন্নয়নের জন্য।

                        : আমার চক্ষু চড়কগাছ। বলেন কি? তাই নাকি ? প্রতিদিন?

                        : তুমি জান না? রেডিওতে ১০ বছর ধইরা কি চাকুরী করতাছ?

                        : আমার লজ্জা লাগল, তাইত, বিষয়টি আমার জানা উচিত ছিল।

আলু ভাইয়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশ বেতারের সম্পর্ক হচ্ছে আমরা উন্নয়নের জন্যে প্রতিদিন ৪৭৭ ঘন্টা অনুষ্ঠান প্রচার করি। আলু ভাইয়ের ভাষ্যে, দেশের উন্নয়নতো আমরাই করছি! হুমম, খুবই গুরুতর সম্পর্ক। অবশ্য, তারপরও মনের ভেতর, কেমন যেন খুঁত খুঁত ভাব রয়েই গেল। এই যে ৪৭৭ ঘন্টার অনুষ্ঠান, -এর ফলশ্রুতিতে সমাজ জীবনে কি কি পরিবর্তন আসছে? সম্পর্কটি আমরা ভেঙে-চূঁড়ে দেখছি না কেন? একে কত ভাবে আমরা শ্রোতাদের কাছে পৌছে দিচ্ছি? গত ২৬ জুলাই ২০১৫ খ্রিঃ তারিখ আই সিটি বিভাগ সূত্রে  দি ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী  বর্তমানে বাংলাদেশে ১২.৬ কোটি মোবাইল সংযোগ সক্রিয় রয়েছে এবং এদের মধ্যে ৩০ শতাংশ গ্রাহক স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছেন। সূত্রানুযায়ী বর্তমানে দেশে ৪.৭৪ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন।  সংবাদটি পড়ে আমি পুলকিত! বলে কি? দেশের এত উন্নতি। আমার মনে হলো, “কোনও ভাবেই দেশের অনলাইন মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যাটিকে এখন আর নগন্য বলে উড়িয়ে দেয়া যাবে না।” বরং এ হিসেবে যদি ভুল না থাকে, সে ক্ষেত্রে অনলাইন মাধ্যম বাংলাদেশ বেতারের জন্য শ্রোতা আকর্ষণের নিঃসন্দেহে একটি সম্ভাবনাময় নতুন অঙ্গন! আচ্ছা, বাংলাদেশ বেতার কি পারবে, পরিবর্তিত শ্রোতা গোষ্ঠীর চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে  ডারউইনের  তত্বের মতো করে সব থেকে বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নিজের কার্যক্রমকে মানিয়ে নিতে? ভাবছি, আলু চৌধুরীকে এই প্রশ্ন অবশ্যই করব।

বিসিএস তথ্য (সাধারণ) বেতার কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি কর্তৃক প্রকাশিত অনুরণন-৪ সংখ্যা ।

শ্রোতাদের কাছে বার্তা ও বিনোদন পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ বেতার সতত কাজ করে চলেছে। বর্তমানে জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে বেতার অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। প্রচারিত অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সাথে সাথেই ইথারে হারিয়ে যায়। এটি বেতার মাধ্যমের সবচাইতে বড় দূর্বলতা।  আলু চৌধুরী সব সময়ই বলেন “বন্দুকের গুলি আর রেডিওর বুলি একবার গেলে আর না মেলে।”। আমি আলু ভাইয়ের কথা অমান্য করি কিভাবে। আচ্ছা, তারপরও ভাবছি বেতার অনুষ্ঠানকে আর কি কি ভাবে শ্রোতার কাছে পৌঁছানো যায়? একটি হতে পারে, সোস্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার) অথবা অন্যকোন প্লাটফর্মে অনুষ্ঠানের প্রচারণা করা। দ্বিতীয়ত, হতে পারে মোবাইলের শর্ট কোড ব্যবহার করে দেশের ১২.৬ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী শ্রোতার কাছে অনুষ্ঠানের বার্তা পৌছে দেয়া। আরো হতে পারে নিজস্ব ওয়েব সাইটের মাধ্যমে পডকাস্ট করে সারা বাংলাদেশে নির্দিষ্ট বেতার অনুষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং ঘটানো। যে সকল অনুষ্ঠানের পডকাস্ট করা হবে, তার একটি টেক্সট কপি ওয়েভসাইটে থাকা প্রয়োজন। এতে করে প্রয়োজনে অনুষ্ঠান উপকরণের প্রিন্ট ভার্সন শ্রোতা সংগ্রহে রাখতে পারবে। অথবা হতে পারে, অনুষ্ঠান উপস্থাপনার নতুন ধরণ ভিজ্যুয়াল রেডিও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্ভাবনাময় শ্রোতাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন অনুষ্ঠান প্রযোজনা করা। এরই সাথে অনলাইন প্লাটফর্মে ভিজ্যুয়াল প্রচারণাও যুক্ত হতে পারে । মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাটিকে মাথায় রেখে আইভিআর রেডিও এর বিষয়টিও আমরা বিবেচনা করতে পারি। এতে নতুন নতুন শ্রোতা তৈরি হবে। আচ্ছা, ভিজ্যুয়াল প্রচারণা কি ঠিক হবে? কারণ বাংলাদেশ বেতার তো ভিজ্যুয়াল মিডিয়া নয়। এইটি তো অডিও মিডিয়া! এই যুক্তি অনেকে দিতে পারেন। কিন্তু এটি দূর্বল যুক্তি। গত ১৬ এপ্রিল ২০১৫ খ্রিঃ তারিখ মুন্সিগঞ্জ জেলার মেঘনা নদীতে একটি লঞ্চ ডুবিতে প্রায় শতাধিক লোক প্রান হারান। দ্রুত নিউজ কাভার করার জন্য টেলিভিশন মিডিয়াগুলো তাদের সংবাদে স্টুডিও থেকে সরাসরি টেলিফোনে রিপোর্টারদের কাছ থেকে ফোন ইন করে রিপোর্টিং করেন। টেলিভিশন স্টেশনগুলো তাদের মূখ্য উপকরণ ফুটেজ বাদ দিয়ে বেতারের মূখ্য উপকরণ শব্দ দর্শকদের শোনালেন। বেতারের এই প্রযুক্তি সময় স্বল্পতার কারনে টেলিভিশন তার দর্শক ধরে রাখার জন্য করতে পারলে, বেতার মাধ্যম কেন শ্রোতা তৈরির জন্য ভিজ্যুয়াল প্রমোশন ব্যবহার করতে পারবে না? উত্তর কি এই প্রশ্নের? আমার কাছে নেই। নিশ্চয়ই, আলু চৌধুরীর কাছে আছে।

গত তিন প্রজন্ম ধরে গণমাধ্যম জগতে ভোক্তা নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মীকরণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ  পরিবর্তন আমরা লক্ষ করেছি। আমাদের পিতামহদের প্রজন্ম পত্রিকার ব্যাপক প্রকাশ এবং আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা প্রতক্ষ করেছেন নিঃসন্দেহে। আমার বাবা এবং সমসাময়িক  প্রজন্ম বেতার তরঙ্গের অভাবনীয় ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করেছেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বেতার ছিল মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট। কি অসাধারণ ছিল তার আবেদন। আমার মনে পড়ে, ছেলেবেলায় আমাদের বাসায় প্রতিবেশীরা প্রতি মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটায় আসতেন ধারাবাহিক নাটক সকাল সন্ধ্যা দেখবার জন্য। আজকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাদের ছোটবেলা থেকেই প্রতিনিয়ত অভ্যস্ত হচ্ছেন অনলাইন মিডিয়ার  নব নব প্লাটফর্মে। মজার বিষয় হচ্ছে প্রথম যখন বেতার মাধ্যমের আর্বিভাব হয়, তখন বলা হয়েছিল ছাপানো পত্রিকার দিন শেষ। কিন্তু পরবর্তীতে এমনটি ঘটেনি। উপমহাদেশে ১৯৩৯-এর দিকে বেতার মাধ্যমের আর্বিভাব হলেও আজও টিকে আছে ছাপানো পত্রিকা।  টেলিভিশন যন্ত্রের আবিষ্কারেও ভাবা হয়েছিল এবার বুঝি বেতারের দিন শেষ।  কিন্তু এমনটি ঘটল না এবারও । আজও টিকে আছে পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন এই অনলাইন মিডিয়ার যুগে। আর এখনতো আমাদের দেশে বেশ জাকিয়ে বসেছে প্রাইভেট এফ এম। সুন্দর সুন্দর গানের পরিবেশনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মাধ্যমটি। এই প্রসঙ্গে মিডিয়া গবেষক রুডিন (২০১১) বলেছেন: “এখন পর্যন্ত কোন নতুন মিডিয়া বিদ্যমান মিডিয়াকে প্রতিস্থাপন করতে পারেনি, যদিও টিকে থাকার জন্য প্রতিটি মিডিয়াকে সবসময়ই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপখাওয়াতে হয়েছে”। রুডিন উদাহরন দিতে গিয়ে বলেছেন, “২০১১ সালে লন্ডনে রাজকীয় উইলিয়াম এবং কেট মিডলটন দম্পতির বিবাহ অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচারে ব্যাপক টিআরপি পাওয়া সত্বেও লন্ডনের বাইরে সারা দুনিয়াতে প্রায় ৪০ কোটি দর্শক এই অনুষ্ঠান পরবর্তীতে ইউটিউবে উপভোগ করেছেন।”  রুডিন এই উদাহরনের মাধ্যমে প্রচলিত মিডিয়ার সাথে নতুন মিডিয়াকে সম্পূরক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এবং সময়ের সাথে উভয়ের গুরুত্ব এবং চাহিদায় পরিবর্তনের প্রবণতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

বেতার মাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হচ্ছে এর “তাৎক্ষনিকতা”। অন্য যে কোনও মিডিয়ার তুলনায় বেতার দ্রুততম সময়ে লক্ষ্যদলের নিকট বার্তা পৌছাতে সক্ষম। আমরা প্রায়শঃ বলে থাকি দুর্যোগকালীন সময়ে বেতার খুবই কার্যকর মিডিয়া। বোধ করি, এর “তাৎক্ষনিকতা” গুনটিকে বিবেচনা করেই আমরা এমনটি বলে থাকি। এ প্রসঙ্গে এলান (২০০৬),  ২০০১ সালের নাইন ইলেভেন ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন,“আক্রমনের সময়টিতে মার্কিন জনগণের অধিকাংশ বেতার মাধ্যমের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল  ছিল । বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীর চাপের কারণে ইন্টানেট সেবা ব্যান্ডউইথ সংকটে পড়েছিল। ফলে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো কাজ করছিল না। আর, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তখনো ফুটেজ প্রদর্শন শুরু করতে পারেনি”। এলান (২০০৬)-এর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে চ্যান্টলার এবং স্টিওয়ার্ট (২০০৩) বলেন, “মূলত বিষয়টি হচ্ছে বেতার ব্যতীত অন্যান্য প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সেবা সরবরাহ করতে অনেক বেশী জনবল এবং সময়ের প্রয়োজন হয়”। এ প্রসঙ্গে লেখকদ্বয় মার্কিন একটি বেতার স্টেশনের চাতুর্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন তুলে ধরেন, যেখানে ইংরেজীতে বলা হয়েছে,  “You can watch it tonight, you can read it tomorrow, but you can hear it now on News Talk 106”.

গত পরশু আলু চৌধুরীর সাথে দেখা অফিসের কড়িডোরে। বললেন: কি অবস্থা? কেমন আছ?

বিনয়ের সাথে বললাম  : খুব ভাল আছি।

: ইদানিং কি করছ? জানতে চাইলেন আগ্রহ ভরে।

: জ্বি, আগামী ঈদে প্রচারের জন্য একটি নাটক করব ভাবছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না এই নাটকের টিজি কারা হবেন।

: বুঝলাম না। কি কও মিয়া। টিজি মানে কি?

: জ্বি মানে, টি জি, টারেগেট গ্রুপ, টিজি।

: আচ্ছা, এইটা কোনও বিষয় হইল। তুমি তোমার টিজি “সাধারণ” কইরা দাও। দেখ, এতে হবে  কি, সমাজের সবাই এই নাটক থেকে বেনিফিট পাইব। এতে সবার উপকার হইব। তুমি পারসোনালি কার সাথে বৈষম্য করলা না আর কি। কি বল, আমার যুক্তি কি ঠিক আছে?

: আমি বুঝতে পারছি না, ঠিক কিভাবে থাকে? আমি পারসোনালি কার সাথে বৈষম্য করলাম না মানে কি? কিন্তু কিছু বলছিও না। উনি, আলু চৌধুরী। বড়ই জ্ঞানী মানুষ। ওনার সাথে কি তর্ক করা মানায়?

বিনয়ের সুরে বললাম, না মানে, বিবিসিতে শুনেছি, ওরা ওদের টিজি-কে ছয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করে । এরপর কিছু কাজ করে ন্যাশনাল রেডিও আর কিছু করে লোকাল রেডিও। তো, আমরা কি পারি না এই রকম কিছু করতে?

আলু চৌধুরী বিরক্তি ভরা চাহনীতে আমার দিকে তাকায়ে রইলেন। আমি সাহস করে বললাম: প্লিজ, একটু বুঝিয়ে বলি। বিবিসি রেডিও ওদের কার্যক্রম মোট দাগে, ছয় ধরনের শ্রোতার জন্য সম্প্রচার করে থাকে। নীচের ছকটি দেখিয়ে বলি আমরাও কি এই ভাবে কাজ চালাতে পারি না?

 

লক্ষ্যদল সংজ্ঞা
এ উচ্চ পেশাগত এবং ব্যবস্থাপনা কাজের সাথে সংশ্লিস্ট ব্যক্তিবর্গ। উদাহরণ: বিচারক, শীর্ষস্থানীয় সিভিল সার্ভেন্ট, অধ্যক্ষ, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক।
বি মধ্যম পর্যায়ের পেশাগত এবং ব্যবস্থাপনা কাজের সাথে সংশ্লিস্ট ব্যক্তিবর্গ। উদাহরণ: মধ্যম পর্যায়ের সিভিল সার্ভেন্ট, আইনজীবি, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক, প্রধান শিক্ষক
সি-ওয়ান জুনিয়র ব্যবস্থাপক, তত্বাবধায়ক, অফিস ক্লার্ক, অফিস ব্যবস্থাপক, শিক্ষক এবং সাংবাদিক
সি-টু দক্ষ পেশাগত হস্তচালিত মেশিনারী অপারেটর, লেদ মেশিন চালক, দক্ষ শ্রমিক
ডি অর্ধশিক্ষিত-অদক্ষ শ্রমিক, কায়িক শ্রমিক, ভ্যান চালক, রিক্সা চালক
ই পেনশনভোগী জনগোষ্ঠী, বিধবা/বিপত্নীক, নৈমিত্তিক শ্রমিক,  শিক্ষার্থী

ছক-১ : বিবিসি বেতার অনুষ্ঠানের লক্ষদল সমূহ  (সূত্র: চ্যান্টলার এবং স্টিওয়ার্ট – ২০০৩)

 

আরেকটু যোগ করে বললাম: উপর্যুক্ত ছকের সি-টুডিই লক্ষ্য দল নিয়ে কাজ করে লোকাল রেডিও আর এবিসি-ওয়ানসি-টুডিই  লক্ষ্য দল নিয়ে কাজ করেন ন্যাশনাল রেডিও। সুতরাং,  আমাদের আঙ্গিকে আমাদের বাস্তবতায়ে এই ছককে সাজিয়ে আমরা কি আঞ্চলিক এবং জাতীয় বেতারকে আরো বেশী পেশাদারীভাবে গড়ে তুলতে পারি না?

চোখের চাহনী আর মুখের ভঙ্গীমায় বুঝলাম, আলু চৌধুরী বেশ বিরক্ত। আমিও কিছুটা অস্বস্তি বোধ কেরতে লাগলাম। এত বড় জ্ঞানী মানুষের সামনে আমি এগুলো কি বলছি। নিজেকে ঠিক করে জিজ্ঞেস করলাম, “জ্বি, আমি কি ঠিক বলছি?”

: না, তুমি মোটেও ঠিক বলছ না। শোন এটা বাংলাদেশ। আমরা অনেক কষ্ট করে অনুষ্ঠান বানাই। আর অনুষ্ঠানের টিজি না ফিজি এই সব নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কি আছে? একজন পেশাদারী প্রযোজক তার পেশাদারিত্ব দিয়েই বুঝতে পারেন অনুষ্ঠানের টিজি কারা হবেন। এর জন্য খামোখা ছক করার কি দরকার? সময় নষ্ট না করে স্টুডিওতে কাজ কর । দেশের জন্যে মঙ্গল হবে।

আমি আশ্বস্থ হই। তাইতো! আমার তো পেশাদারিত্ব আছে। বিবিসি ওয়ালাদের তো আর এই সব নাই। তারা অনেক টাকা পায় কাজ করে, আর আমরা,  টাকা না পাইয়াও কাজ করি। আমার ভেতর আলু চৌধুরীর জন্যে শ্রদ্ধা  আরও অনেক বেড়ে গেল। জয়তু! আলু ভাই!

একটি গল্প দিয়ে শেষ করি।  একদিন এক কৃষকের গাধা গর্তে পড়ে গেল। প্রানীটি কয়েক ঘণ্টা ধরে চিৎকার করতে লাগল এবং তার মালিকও চিন্তা করল কি করা যায়। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন গাধাটির অনেক বয়স হয়েছে, তাই এটা মোটেই খারাপ হবে না যদি গাধাটিকে মাটি দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে, মেরে ফেলা হয়।

তিনি তার প্রতিবেশীদের ডাকলেন তাকে সাহায্য করার জন্য। তারা সবাই একটি করে বেলচা নিল এবং ওই গর্তে মাটি ফেলতে লাগলো। গাধাটি বুঝল যে তাকে ভয়ঙ্করভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে। গাধাটি আরও বেশী চিৎকার করতে লাগলো।

গর্তে অনেকটা মাটি ফেলার পর, কৃষক শেষ বারের মতো গর্তের দিকে তাকাল । তিনি বিস্মিত হয়ে গেলন! গর্তে যত বার বেলচা থেকে মাটি পরতে লাগলো, গাধাটি তত বার তার দেহ থেকে মাটিগুলো ঝেড়ে, ঐ মাটির উপর তার পাগুলো রাখতে লাগলো। কৃষকের প্রতিবেশীরা অবিরাম ভাবে বেলচা দিয়ে মাটি ফেলতে লাগলো এবং প্রানীটি একইভাবে তার দেহ থেকে মাটি গুলো ঝেড়ে, ঐ মাটির উপর তার পাগুলো রাখতে লাগলো। একসময় দেখা গেল গাধাটি ঠিক গর্তের উপরে উঠে আসল এবং জীবনটা রক্ষা করল!

প্রিয় পাঠক, বুদ্ধিমত্তা এবং খাপখাওয়ানোর গুনে গাধাটি তার জীবন রক্ষা করলেও, বর্তমান বিশ্বে ডারউইনের তত্ব অনুসারে কল্পিত এই গর্ত থেকে উঠে দাঁড়ানোর জন্য বেতার মাধ্যমের কি করনীয় কিছু আছে? ভাবছি, এমন পরিস্থিতি হলে, সত্যিই করণীয় কি হবে? এই প্রশ্নটি করব আলু চৌধুরীকে। আগামী বার, নিশ্চয়ই!

 

*লেখক দেওয়ান মোহাম্মদ আহসান হাবীব, বাংলাদেশ বেতার সদর দপ্তরে উপপরিচালক (ট্রাফিক) পদে কর্মরত।


তথ্যসূত্র :

  1. রুডিন আর (২০১১), ব্রডকাস্টিং ইন দ্যা টুয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরী, লন্ডন: প্যালগ্রেভ ম্যাকমিলান, পৃ: ২ ।
  2. এলেন এস (২০০৬), অনলাইন নিউজ: জার্নালিজম এন্ড দ্যা ইন্টারনেট, নিউইয়র্ক : ওপেন ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃ:৩৩।
  3. চ্যান্টলার পি এবং স্টিওয়ার্ট পি (২০০৩), বেসিক রেডিও জার্নালিজম, লন্ডন: ফোকাল প্রেস, পৃ: ১০, ৭২।

 

Share on Social Media
facebook twitter linkedin

1 thought on “প্রবণতায় আবর্তন”

  1. Sumon Islam says:
    November 14, 2016 at 9:20 am

    Good thinking. Wish you all the best Ahsan Bhai.

    Log in to Reply

Leave a Reply Cancel reply

You must be logged in to post a comment.

Categories

  • Ahsan's Blog (12)
  • Audio Story (9)
  • Extra Corner (17)
  • Gallery (1)
  • Media laws (42)
  • Video Story (16)

Recent Comments

  • Katharine Loveman on Promoting Integrity and Reducing Corruption in Bangladesh
  • Molly Caddell on Promoting Integrity and Reducing Corruption in Bangladesh
  • Scarlet Redcay on Gramsci’s Theory of Hegemonic functions in the age of citizen journalism and social media
  • AntMiner Frimware on Gramsci’s Theory of Hegemonic functions in the age of citizen journalism and social media
  • France Brumfield on Promoting Integrity and Reducing Corruption in Bangladesh
©2021 Ahsan Habib | WordPress Theme by Superbthemes.com